ঐতিহ্যের স্মারক সুখাইর জমিদার বাড়ি

প্রকাশঃ মার্চ ১৫, ২০১৫ সময়ঃ ৭:২৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:২৮ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষন ডটকম:

6008ইটের বাড়ির মধ্যখানে মসৃন পিচঢালা পথ। সে সব লাল রঙা বাড়ির ছোট্ট খোঁপে চড়ই পাখির দৌঁড়। সে দৌড়ের সঙ্গি হবে ক্যামেরা, চলবে ক্লিকক্লিক। এসব বানানো গল্প নয়।

সত্যি হবে যদি আপনি ছুটে যেতে পারেন ইতিহাসের কাছে। যেখানে গেলে দেখতে পাবেন জীবনের নানা অনুসঙ্গ, জীবন যাপন, বিলাসিতা। তাহলে চলে যান একটি আকর্ষনীয় ঐতিহাসিক স্থানে। যেখানে গেলে দেখতে পাবেন জমিদার বাড়ির কারুকাজ।

ঐতিহাসিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ জনপদে অবস্থিত রাজপ্রাসাদগুলো ধ্বংসের মুখে পতিত হওয়া সত্ত্বেও আজো এগুলো আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তেমনই একটা স্থান সুখাইর জমিদার বাড়ি।

১১০২ বঙ্গাব্দে নির্মিত হয় সুখাইর জমিদার বাড়ি। সুখাইরের জমিদার মোহন পাল ১৬৬৫ সালে ২৫ একর জমির ওপর বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। সে সময়ে ৩২ পরগনায় বিভক্ত ছিল সুনামগঞ্জ। জমিদারির চতুর্সীমা ছিল পূর্বে জামালগঞ্জ, পশ্চিমে ধর্মপাশা, উত্তরে বংশীকুণ্ডা ও দক্ষিণে গাগলাজুর।

জমিদার বাড়িতে দেখতে পাবেন আকর্ষণীয় বাংলো, জলসাগর, গুদামঘর, কাচারিঘর, রেস্টহাউস ও চারটি থাকার ঘর। সদ্য অতীতে তা বিলীন হলেও এখনও বেশ আকর্ষণীয় এ জমিদার বাড়িটি। কথিত রয়েছে, সুখাইড় জমিদারির সীমানা গজারিয়া নদীর উত্তরপাড় থেকে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে জমিদারদের বিরুদ্ধে যে নানকার বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল তার সূত্রপাত সুখাইর জমিদার বাড়ি থেকেই।

SUKAIR02মুঘল শাসনামলে হুগলি থেকে আসাম যাওয়ার পথে মহামানিক্য দত্ত রায় ভাটির প্রকৃতি-রূপ-ঐশ্বর্যে বিমোহিত হয়ে সুখাইর অঞ্চলে জায়গা কিনেন। ১৯০২ বঙ্গাব্দে জমিদারদের প্রথম পুরুষ বিশ্বনাথ চৌধুরীর আমলে ২৫ একর জায়গা নিয়ে শুরু হয় মূল স্থাপনা।

কয়েক পুরুষের চেষ্টায় শেষ হয়েছিল বাড়ির নির্মাণকাজ। জমিদারি যুগে সুনামগঞ্জ ছিল ৩২টি পরগনায় বিভক্ত। দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলীর কারণে সুখাইর জমিদার বাড়ি হাওর রাজ্যের রাজমহল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল।

এক সময় এ বাড়ির মালিকানায় ছিল ধানকুনিয়া বিল, চারদা বিল, কাইমের দাইড়, সোনামোড়ল, পাশোয়া, ছাতিধরা, রাকলা, বৌলাই, নোয়ানদী, চেপ্টা এক্স হেলইন্নাসহ ২০টি জলমহাল। সুখাইড় জমিদার বাড়ি এখনও ঐশ্বর্যময় দিনগুলোর সাক্ষী বহন করছে।
তবে জলসাঘর, বৈঠকখানা, বাংলা, বিশ্রামাগার, দুর্গামন্দির ইতোমধ্যে ধসে গেছে।

এককালে যে জমিদার বাড়িকে আবর্তিত করে পরিচালিত হত প্রজাব্যবস্থা, তার চার ভাগের মধ্যে এখনও বড়বাড়ি, মধ্যমবাড়ি ও ছোটবাড়ি টিকে আছে। জমিদারি পতনের পর বাড়িগুলোর অনেক বদ্ধঘর ও সিন্দুক রয়েছে; যা আজও খোলা যায়নি। অযত্নে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাড়ির দেয়ালের নান্দনিক কারুকার্যগুলো। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও সরকার উদ্যোগী হলে নতুন কিছু আবিষ্কারেরও সম্ভাবনা রয়েছে।

৩শ বছরের পুরনো সুখাইর জমিদার বাড়িটি আমাদের ঐতিহ্যের স্মারক ও জাতীয় সম্পদ। এগুলো সংস্কার ও সরক্ষণ করলে পর্যটন শিল্পসমৃদ্ধ হবে। সেই সঙ্গে আমাদের গর্বিত ঐতিহ্য সম্পর্কে ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতে পারবে।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G